বন্ধুত্বর মেলা
তাপস মালাকার,নিশিগঞ্জ : নিশিগঞ্জে আজও অভিনব মেলায় এসে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন নয়া প্রজন্মের একাংশ।হাতে পান সুপারি নিয়ে খুঁজে নেন সখা অথবা সখি।যদিও ইন্টারনেনেটে ঘরে বসে মাউসের এক ক্লিকেই বা মুঠো ফোনের মাধ্যমে এখন বন্ধুত্ব পাতানো সম্ভব। কোচবিহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের তরুণ- তরুণীরা প্রাচীন লোক ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজও তাঁদের বন্ধু খুঁজে নেন সখা- সখীর মেলায় ।সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই মেলা চলল নিশিগঞ্জ চড়কেরডাঙ্গা গ্রামে । প্রতিবছর অসংখ্য তরুণ- তরুণী বন্ধুত্বের খোঁজে ভিড় জমান এই মেলায় ।
মেলায় চতুর্ভূজ মূর্তির সামনে পুরোহিতের কাছে মন্ত্র পাঠ করে সখা অথবা সখী পাতানো হয় । চতুর্ভূজ মানে এখানে নারায়ণ । তাই গ্রাম বাংলায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই মেলা চতুর্ভূজের মেলা নামেও পরিচিত ।মেলার এক সপ্তাহ আগে লম্বা বাঁশের মাথায় নিশান মেলার মাঠে লাগিয়ে দেওয়া হয় প্রথা মেনে । তা দেখে স্থানীয় মানুষ জানতে পারেন মেলা আসন্ন । মেলায় নানা পসরার পাশাপাশি দোলায় চাপিয়ে নিয়ে আসা হয় চতুর্ভূজের মূর্তিকে ।মেলা কমিটির সদস্য গনেশ দেবসিংহ বলেন ,' রাজবংশী সমাজের বন্ধুত্ব পাতানোর মেলা বহুবছর ধরে চলে আসছে । আমরা চেষ্টা করছি প্রায় হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ।'
মেলার বিগ্রহ চতুর্ভূজের পূজারি উপেন্দ্র নাথ অধিকারী জানান , ' এবছরও পান- সুপারি হাতে নিয়ে দেবতার মূর্তির সামনে অঙ্গীকার করে প্রচুর তরুণ - তরুণী নিজেদের বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন । ' আর সেই বন্ধুত্বের টানেই প্রতিবছর অনেক মানুষ এই মেলায় আসেন । এছাড়া নতুনেরাও আসেন বন্ধুত্বের খোঁজে ।
স্থানীয় শিক্ষক ও লোকসংস্কৃতির গবেষক সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, 'রাজবংশী সমাজের কৃষ্টি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ এই সখা - সখীর মেলা ।শুধু বন্ধুত্বের জন্য মেলার আয়জনের পরম্পরা আজও ধরে রেখেছে নিশিগঞ্জের চড়কেরডাঙ্গা গ্রামের মানুষ।'