অরুনাভ বনাম বিশ্বজিৎ? মাথাভাঙায় আগমনীর শোভাযাত্রা ঘিরে টক্কর

নিজস্ব প্রতিনিধি,মাথাভাঙা: মাথাভাঙা শহরে দুর্গোৎসবের আগে আগমনীর শোভাযাত্রা ঘিরে এবার যেন উৎসবের আবহে মিশে গেল রাজনীতির গন্ধ। টানা দু’দিনে পৃথক শোভাযাত্রার আয়োজনে ঝাঁপাল তৃণমূলের দুই শিবির। একদিকে শনিবার শহর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহসভাপতি অরুনাভ গুহ-র উদ্যোগে বর্ণময় আগমনীর শোভাযাত্রা, অন্যদিকে রবিবার মাথাভাঙা পুরসভার উদ্যোগে আয়োজিত আরেকটি রঙিন শোভাযাত্রা। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল— “বেশি নজর কাড়ল কোন শোভাযাত্রা?”

দ্বন্দ্ব নাকি কৌশল?

স্থানীয় মহলে শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের অন্দরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে দুই পক্ষের তৎপরতা নিয়ে। অরুনাভ গুহর শোভাযাত্রায় ছিল ঢাক, ধামসা-মাদলের বোল, কয়েকশো মানুষের পদযাত্রা এবং শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটির অংশগ্রহণ। অপরদিকে পুরসভার শোভাযাত্রায় ছিলেন পুরপতি লক্ষপতি প্রামাণিক,এই তৎপরতায় বাড়তি উৎসাহ নিয়ে মাঠে নামতে দেখা যায় তৃণমূলের শহর ব্লক সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়কে ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই শোভাযাত্রার পৃথক আয়োজন আসলে নেতৃত্বের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই। বিশেষত যেখানে লোকসভা ভোটে তৃণমূল অনেকটা পিছিয়ে ছিল বলে সংগঠনের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে, সেখানে এ ধরনের দ্বন্দ্ব কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন তুলছে।

নেতাদের বক্তব্য

তৃণমূল জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ অবশ্য দ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন— “এখানে কোনো রাজনীতির গন্ধ নেই।সবাইকে নিয়ে পুরসভার উদ্যোগে আজকে বর্ণময় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।” অন্যদিকে শহরের এক পুজো কর্মকর্তার বক্তব্য— “দুপক্ষই চাপ দিয়েছিল মিছিলে অংশ নিতে, কার কথা রাখব তাই নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।”

অরুনাভ গুহ অবশ্য নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন— “আমি দুটি শোভাযাত্রায়ই অংশ নিয়েছি। তবে আমার উদ্যোগে শহরের সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতা করেছেন।”
অন্যদিকে বিশ্বজিৎ রায় বলেন— “পুরসভার উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রায় আমি অন্য কাউন্সিলারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কে কী করেছেন, বলতে পারব না।”

ঐতিহ্য বিসর্জনের আক্ষেপ

শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন আরও গভীরে— “সুটুঙ্গা নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান বন্ধ বহু বছর ধরে। সেটি ফের চালু না করে কেন আলাদা আলাদা আগমনীর শোভাযাত্রা?” তাদের মতে, উৎসবের নামে দ্বন্দ্বপূর্ণ আয়োজন শহরের মূল ঐতিহ্যকে আড়াল করে দিচ্ছে।

রাজনৈতিক বার্তা

দুদিনের পৃথক শোভাযাত্রায় প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মণকে দেখা গেলেও, মন্ত্রী উদয়ন গুহ অনুপস্থিত ছিলেন—যদিও ফেস্টুনে তাঁর নাম ছিল।অবশ্য দিনহাটায় একই সময় পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। এদিন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ,পুরপতি লক্ষপতি প্রামানিক ছিলেন মিছিলের পুরোভাগে।স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের ধারণা, উৎসবকে ঘিরে এই দ্বিমুখী তৎপরতা শুধু শহরের সাংগঠনিক অস্বস্তিকেই সামনে আনল।



Popular posts from this blog

পথ দুর্ঘটনা কমাতে লেজার স্পিডগান নিয়ে রাস্তায় পুলিশ

গণেশের পৈতে চুরির চেষ্টায় চাঞ্চল্য নিশিগঞ্জে

নিশিগঞ্জে কলেজকে সরকার পোষিত করতে গণকনভেনশন