দারিদ্র্য পেরিয়ে স্বপ্নের আলো— উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে সম্ভাব্য ষষ্ঠ মাথাভাঙ্গার সূর্য বর্মন
নিজস্ব সংবাদদাতা,মাথাভাঙ্গা: সংগ্রামই যার জীবনের অন্য নাম, সেই সূর্য আজ আলো ছড়াচ্ছে গোটা কোচবিহার জেলায়। মাথাভাঙ্গা হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সূর্য বর্মন প্রমাণ করে দিয়েছে— লক্ষ্য স্থির থাকলে দারিদ্র্য কোনো বাধা নয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সিমেস্টারে সূর্য রাজ্যে সম্ভাব্য ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে। বিজ্ঞান বিভাগের এই মেধাবী ছাত্র পেয়েছে ৯৭ শতাংশেরও বেশি নম্বর, যা মাথাভাঙ্গা হাইস্কুলের সাফল্যে নয়া পালক জুড়লো।
অভাবই প্রেরণা
সূর্যের বাড়ি মাথাভাঙ্গা–১ ব্লকের কুর্শামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতগ্রামে। বাবা দিলীপ বর্মন, পেশায় একটি বেসরকারি স্কুলের গাড়ির চালক; মা মাধবী বর্মন গৃহবধূ। সংসারের চাপে ভরা জীবন, কিন্তু ছেলের পড়াশোনা নিয়ে তাদের দৃঢ় সংকল্পে কোনো ভাটা পড়েনি। দিলীপবাবু বলেন,
“কষ্ট হলেও ছেলের পড়ার খরচ চালাচ্ছি। কতদিন পারব জানি না, তবে ও যেন নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে— সেই চেষ্টাই করছি।”
সাফল্যের পেছনে ধৈর্য ও অধ্যবসায়
সূর্যের কথায়,
“আমার এই ফলের পেছনে বাবা-মা, গৃহশিক্ষক আর স্কুলের শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সময় পেলেই ক্রিকেট খেলি, গল্পের বই পড়ি— এতে মনটা ভালো থাকে।”
বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কে তার প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৩৮, ৪০ ও ৩৮ (৪০-এর মধ্যে)। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজিতে পেয়েছে ৩৫, ৩৫ ও ৩২ (৩৫-এর মধ্যে)— এক কথায় অসাধারণ
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য— আইআইটি
সূর্যের স্বপ্ন, ভবিষ্যতে আইআইটি-তে পড়াশোনা করে একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। সে বলেছে, “দেশের জন্য কিছু করতে চাই, আর প্রথমে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।”
মাথাভাঙ্গা হাইস্কুলের টিআইসি শ্যামল পাল ও সহশিক্ষক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন,
“সূর্যের এই সাফল্য শুধু বিদ্যালয়ের নয়, পুরো এলাকার গর্ব।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজিবুল হাসান জানিয়েছেন, সূর্যকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান সূর্য আজ শুধু নিজের নয়, গোটা গ্রামের গর্ব। তার গল্প প্রমাণ করে— পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনের প্রতিকূলতাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক।