খান চৌধুরী আমানত উল্লাহ আহমদের ভগ্নপ্রায় বাড়ি সংরক্ষণের দাবি, পরিদর্শনে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান
ইউবিএন: কোচবিহারের ইতিহাসচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব খান চৌধুরী আমানত উল্লাহ আহমদ— তাঁরই ভগ্নপ্রায় বসতভিটে আজ সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শীতলকুচির বড় মরিচা গ্রামে। ব্রিটিশ আমলে রাজপ্রাসাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি রচনা করেছিলেন অমূল্য গ্রন্থ “কোচবিহারের ইতিহাস”, যেখানে ১৫১৫ থেকে ১৭৮৩ পর্যন্ত কোচ রাজ্যের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবরণ সন্নিবেশিত হয়েছে।
সোমবার ওই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি পরিদর্শনে যান তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন। সঙ্গে ছিলেন নষ্য শেখ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্যরাও। স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে বাড়িটি সংরক্ষণের প্রস্তাব দেন তিনি।
গিরীন্দ্রনাথ বর্মনের কথায়,
“এই বাড়িটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি কোচবিহারের ইতিহাসের সাক্ষী। খাঁ চৌধুরী আমানত উল্লাহ আহমদ ছিলেন কোচবিহারের প্রথম প্রামাণ্য ইতিহাসলেখক। তাঁর বাড়িটি হেরিটেজের আওতায় আনা উচিত—এই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে পেশ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“হেরিটেজ মানে শুধু কোচবিহার শহর নয়। জেলার গ্রামাঞ্চলেও বহু ঐতিহ্যবাহী স্থান আছে, যেগুলিকে সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি অবহেলিত। চুন-সুরকির ইটের দেয়ালে ফাটল, ছাদ ভেঙে পড়েছে, গায়ে গজিয়েছে গাছপালা। ভেতরের কাঠের কাঠামোও প্রায় ধ্বংসের মুখে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, “কোচবিহারের ইতিহাস”–এর প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে, তবে দ্বিতীয় খণ্ড লেখার আগেই আমানত উল্লাহ আহমদের মৃত্যু ঘটে, ফলে কাজটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
গিরীন্দ্রনাথ বর্মন জানান,
“আমরা চাই বড় মরিচার এই বাড়ি ও কান্তেশ্বর রাজার গড়—দু’টিকেই হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসন, সংস্কৃতি দপ্তর ও হেরিটেজ বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে সংরক্ষণের কাজ শুরু করা প্রয়োজন।”
ইতিহাসবিদদের মতে, বাড়িটি সংরক্ষিত হলে তা শুধু একটি ঐতিহ্য নয়—উত্তরবঙ্গের ইতিহাসচর্চা ও রাজ ঐতিহ্যের এক জীবন্ত পাঠশালা হয়ে উঠবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।