চাকে ঢিল পড়লেই বিপদ ! মাথাভাঙায় ভীমরুলের চাক সড়াতে আসরে পুলিশ ও বনদপ্তর!
“ভিমরুলে মৌমাছিতে হল রেষারেষি,
দুজনায় মহাতর্ক শক্তি কার বেশি।”
কবিতার সেই ভিমরুল শক্তির অহংকারে তর্ক করেছিল মৌমাছির সঙ্গে।
কিন্তু আজকের বাস্তবে, সেই শক্তিশালী ভিমরুলরাই টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে — মানুষের হাতেই।
শনিবার রাতে মাথাভাঙা হাই স্কুলের সামনে এক দেবদারু গাছে দেখা যায় বিশাল ভিমরুলের চাক।
পুজোর ছুটির পর স্কুল খুলতেই শিক্ষকদের নজরে আসে ভয়ঙ্কর দৃশ্যটি।
পড়ুয়া ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার কথা ভেবে সঙ্গে সঙ্গে বন দপ্তরে খবর পাঠানো হয়।
অভিজ্ঞ মৌচাক সরানো বিশেষজ্ঞ মফিজুল বাজিগর এসে সাবধানে চাকটি সরিয়ে দেন।
সেই সময় স্কুল সংলগ্ন রাস্তা ও দোকানপাট কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়—
কারণ সামান্য ঢিল পড়লেও ভিমরুলের আক্রমণে বিপদে পড়তে পারত অনেকে।
চাক সরিয়ে দেওয়ার পর এলাকা জুড়ে স্বস্তি ফিরেছে ঠিকই,
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—ভীমরুকরা কেবল বাঁচার জায়গা খুঁজছে মানুষের ফেলে আসা প্রকৃতিতে?
সম্প্রতি ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য—
ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,
জৈব কীটনাশকে থাকা ছত্রাক (বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা) বোলতা বা ভিমরুলের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়।
পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের মতে,
“এই ছত্রাক বোলতার শরীরে ঢুকে ১৯ দিনের মধ্যে তাকে মেরে ফেলে।
যদিও সিনথেটিক কীটনাশক আরও দ্রুত প্রাণঘাতী,
জৈব কীটনাশকও ভুলভাবে ব্যবহার করলে সমান ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।”
অর্থাৎ, যেই ‘পরিবেশবান্ধব’ কীটনাশক আমরা ফসল বাঁচাতে ব্যবহার করি,
সেই ওষুধই ধীরে ধীরে হত্যা করছে প্রকৃতির উপকারী এই পতঙ্গদের।
ভিমরুলেরা প্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—
তারা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে এবং ফুলের পরাগায়নে সাহায্য করে।
কিন্তু রাসায়নিক কিংবা জৈব—দুই ধরনের কীটনাশকই তাদের জীবন বিপন্ন করছে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় “ভিমরুলে মৌমাছিতে হল রেষারেষি”—
আজ সেই রেষারেষি যেন নতুন রূপে ফিরে এসেছে—
এবার তর্কটি ভিমরুল আর মানুষের মধ্যে।
মানুষ নিজের ফসল রক্ষা করতে গিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্যকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
মাথাভাঙা হাই স্কুলের ভিমরুলের চাক হয়তো সরিয়ে ফেলা গেল,
কিন্তু প্রকৃতির যে সূক্ষ্ম সম্পর্ক আমরা ভাঙছি—
সেটি কি এত সহজে ফিরিয়ে আনা যাবে?
ভিমরুলের হার মানে প্রকৃতির এক অদৃশ্য পরাজয়।
আর মানুষ?
সে হয়তো আপাতত জিতছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত—
জিতটা কার, হারটা কার—তা সময়ই বলবে।